ইয়াসে পরবাসী হলেন ব্রাহ্মন দম্পতি : প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে

26th May 2021 11:21 pm বর্ধমান
ইয়াসে পরবাসী হলেন ব্রাহ্মন দম্পতি : প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে


আজিজুর রহমান ( গলসী ) : কেউ ফিরেও তাকান না। আবার যারা তাকান তাঁরা মনেকরে মাটির উঁচু ঢিবির উপরে আগাছা জন্মেছে। কিন্তু বাস্তবে সেটি  মাটির ঢিবি নয়। সেটি আশলে পূর্ব বর্ধমানের গলসি ১ ব্লকের গলিগ্রামের হতদরিদ্র ব্রাহ্মন  ত্রিপুরারী মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি।বুধবার ইয়াসের’ প্রভাবে হওয়া ঝড় বৃষ্টির মধ্যে তাই জীবনের ঝঁকি নিয়ে আর ওই বিপদজনক বাড়িতেই থাকার শাহস দেখান নি ত্রিপুরারী বাবু । স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে চোখের জল ফেলে দিন কাটানো  ব্রাহ্মন দম্পতি এই দিনটা কাটালেন অন্যের আশ্রয়েই। তবুও না প্রশাসন , না পঞ্চায়েত কেউ তাঁদের দিকে ফিরেও তাকালেন না ।  পুজো অর্চনা করে যে টুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই দিন গুজরান হয়  ত্রিপুরারী  মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের। তাঁর স্ত্রী আশাদেবী সাধারণ গৃহবধূ । দম্পতির দুই সন্তান নাবালক ।তাঁদের  নিজের বাড়িটি মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার । অর্থের অভাবে মেরামতি করতে না পারায়  বাড়িটি অনেকদিন হল জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ।নিরুপায় ব্রাহ্মন পরিবারেয় এখন ভরসা  অন্যের আশ্রয় । তাঁদের ভগ্নপ্রায়  মাটির বাড়িটি এখন শুধু কোনওরকমে দাড়িয়ে আছে মাত্র ।

আশাদেবী এদিন চোখের জল ফেলতে ফেলতেই জানালেন , গত বছর আমফান ঝড়ে তাঁর শ্বশুর বাড়িটি ব্যাপক ভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হয় । আর্থিক সামর্থ না থাকায় নিজেদের বাড়িটির সংস্কার কাজ করাতে পারেন নি ।  তাঁর স্বামী সরকারী আবাস যোজনার একটা পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্যে বিডিও অফিসে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে ছিলেন । এছাড়াও স্থানীয় পঞ্চায়েত ,এলাকার নেতা,জনপ্রতিনিধি সবার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। ঘর মিলবে বলে সবাই কথাও দিয়েছিলেন।কিন্তু সরকারী ঘর পাওয়ার সৌভাগ্য আজও তাঁদের হয় নি । গুহা
 মানবের মতো জরাজীর্ণ হয়ে পড়া নিজেদের বাড়িতে আর বসবাস করতে পারেন নি ।তাই 
এই প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে  সন্তানদের নিয়ে এখন তাদের অন্যের আশ্রয়ে ঠাঁই নিতে হয়েছে ।রান্নাবান্না,খাওয়াদাওয়া বসবাস সবের জন্যে অন্যের আশ্রই তাঁদের এখন ও একমাত্র ভরসা । 

ব্রাহ্মন পুজারী ত্রিপুরারী মুখোপাধ্যায় বলেন ,
এখন তাঁদের বাড়িটির এমন অবস্থা হয়েছে যা একঝলক দেখে অনেকে আবার বাড়ি বলেই মনে করতে পারেন না । সবাই ভাবেন উঁচু মাটির ঢিবির উপরে আগাছা জন্মেছে । ত্রিপুরারী বাবু আক্ষেপ প্রকাশ করে এদিন বলেন ,গতবছর  আমফান ঝড়ের সময় তাঁর  বাড়িটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় । সেই আমফানের পর তাঁদের এলাকার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারী প্রকল্পে পাকা বাড়ি পেয়েছেন । কিন্তু তিনি প্রশাসনের দরজায় দরজায় অনেক ঘুরেও সরকারী প্রকল্পে ঘর আর পান নি । ত্রিপুরারীবাবু বলেন , ভাঙা বাড়ি টুকু ছাড়া তাঁদের সহায় সম্বল বলতে আর কিছু নেই । পুজো অর্চনা করে যে টুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই কোনও রকমে তাঁদের পরিবারের পেট চালে । কপালে কোনদিন শাক ভাত ,তো কোনদিন নুনভাত জোটে ।এখন  লকডাউনের কারণে পুজো পাঠও বন্ধ ।তারজন্যে  করুন অবস্থা নেমেছে তার পরিবারে। একদিকে পেটের জ্বালা,অন্য  দিকে বাসগৃহের চিন্তা। কোনটা নিয়ে যে ভাববেন তার কুল কিনারা গলসির গলিগ্রামের ব্রাহ্মন দম্পতি । এই বিষয়ে গলসি ১ ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস বলেন,“কয়েকমাস হল তিনি গলসি ১ ব্লকের বিডিও পদে দায়িত্ব পেয়েছেন । ব্রাহ্মন পরিবারের বাসগৃহ সমস্যা বিষয়ে তিনি অবগত নন ।তাই এই মুমুর্তে পরিবারটির জন্যে কি করা যাবে তা বলতে পারছেন না ।  পরিবারের আবেদন পেলে খতিয়ে দেখে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন“ । বিডিও এমনটা জানালেও পূজারী ব্রাহ্মন পরিবারের এমন দুর্দশার কথা জেনে  ব্যথিত হন পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহকারী সভাধীপতি দেবু টুডু । তিনি জানিয়েছেন ,“ওই ব্রাহ্মন পুজারী সরকারী প্রকল্পে ঘর পাওয়ার ব্যাপারে তাঁর কাছে যদি আবেদন জানায় তিনি দ্রুত তা পূরণের ব্যবস্থা করবেন “ 






Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।